শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০২ অপরাহ্ন
নাজমুছ ছালেহিন:
আর্তমানবতার সেবিকা মোসাঃ কানিজ ফাতেমা। হ্যাঁ বলেছিলাম বর্তমান সময়ের তরুণ সমাজকর্মী এবং আর্তমানবতার এক সেবিকার কথা, তিনিই আজকের Food Collection for Helpless (FcH)-এর প্রতিষ্ঠাতা মোসাঃ কানিজ ফাতেমা। মানুষ মানুষের জন্য, জিবন জিবনের জন্য, ভালোবেসেই করা যায় অসাধ্যকে সাধন, ইচ্ছে শক্তি থাকলেই পৌছানো যায় আর্তমানবতার শিখরে, ঠিক তেমনটিই করে দেখিয়েছেন কানিজ ফাতেমা।
Food Collection for Helpless সম্পর্কে মোসাঃ কানিজ ফাতেমা বলেন, ২০১৫ থেকে আমি সামাজিক কাজ করছি অসহায় মানুষদের খাবার বিতরণ করছি, রমজান মাসে রমজানের বাজার কিনে দেই শীতবস্ত্র দিচ্ছি ঈদের জামা দিচ্ছি চিকিৎসার খরচ বহন করি ব্লাড ম্যানেজড করে দেই। আমি নিজেও ব্লাড ডোনেশন করি। বিভিন্নভাবে অসহায় দরিদ্র মানুষদের সাহায্য করি। অনেক সংগঠনের সাথে কাজ করেছি। ২০২০-এর ডিসেম্বরের ৩১তারিখ আমি হতদরিদ্র পথশিশু মানুষদের হাতে হাতে পৌঁছে দিয়েছিলাম কিছু খাবার আর সেই ছবিগুলো আমি পোস্ট করেছিলাম ফেসবুকে । ফেসবুকে পোস্ট করার পরে অনেক সাড়া পেয়েছি– তারপর আমার হাজবেন্ডের সাথে আমি শেয়ার করলাম যে– আমরা তো সাধারণত যখন রেস্টুরেন্টে খেতে যাই বা বিয়ে বাড়িতে যাই বা কোন পার্টিতে যায় তখন অনেক খাবার রয়ে যায় এই অবশিষ্ট খাবারগুলো অনেকেই ফেলে দেয়– আমি আমার হাসবেন্ড কে বললাম যে– এই খাবারগুলোর যদি আমরা অসহায় মানুষদের হাতে তুলে দেই তখন কেমন হয় । আমার হাসবেন্ড বললেন যে– করোণাকালীন অনেক অসহায় মানুষ খুদার জ্বালায় ভুগছে, আমরা যদি এই কাজটা করি তাহলে অনেক ভালো হয়। তারপর আমি একটা নাম সিলেক্ট করলাম Food Collection for Helpless (FcH).
আমার একার পক্ষে সম্ভব না, কি করব তারপর ফেইসবুকে পোস্ট করা শুরু করলাম– ভলেন্টিয়ার হিসাবে কাজ করলে নক দিবেন। আমার ছোট দুই বোনসহ ৬ জন ভলেন্টিয়ার নিয়ে আমাদের মৌলভীবাজারের সিনিয়র সমাজকর্মীদের সাথে একটা মিটিং করলাম। মিটিং করার পর তাদের কাছ থেকে আইডিয়া নিলাম যে– কাজগুলো আমি কীভাবে কীভাবে করবো। আমি তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করলাম। তারপর আমি ৬ জনকে নিয়ে আবার একটা মিটিং করলাম যে, আমরা কোথায় কিভাবে কাজ করব । আমি ঠিক করলাম যে, মৌলভীবাজার প্রত্যেক রেস্টুরেন্টের পেইজে নক করব । তাদেরকে বললাম যে, আপনাদের যে খাবারগুলো রয়ে যায় পার্সেল করার মত সেই খাবারগুলো কি করেন? তখন তারা বলেন যে, আমরা খাবারগুলো ফেলে দেই। তখন আমি উনাদেরকে আমার FcH সম্পর্কে বললাম বলার পরে আপনাদের যে খাবারগুলো রয়ে যায় তাহলে আপনারা আমাদেরকে নক করবেন– আমরা সেই খাবারগুলো কালেকশন করে অসহায় মানুষদের হাতে তুলে দেব সপ্তাহে দুদিন কাজ হবে।
২০২১ জানুয়ারি ২০তারিখে একটা রেস্টুরেন্টে থেকে খাবার দেয়– প্রথম সেই খাবার মৌলভী বাজারের চোমুনা পয়েন্টে ও পৌর পার্কের সামনে অসহায় মানুষদের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। সেই ছবিগুলো আবার ফেসবুকে পোস্ট করি তারপর থেকে আমাদের ভলেন্টিয়ার বাড়তে থাকে– এখন বর্তমানে আমাদের ভলেন্টিয়ার ৪৫জন কাজ করছে আর আমরা এখন প্রতিনিয়তই খাবার বিতরণ করি। শুধু রেস্টুরেন্ট থেকে না, বিয়ে বাড়ি থেকে ,বার্থডে পার্টি থেকে আবার এমনিতেও বাসায় রান্না হলে FcH সম্পর্কে যারা জানেন তারা আমাদের নক করেন– আমরা সেই খাবারগুলো অসহায় মানুষের হাতে পৌঁছে দেই। তাছাড়া এখন আমাদেরকে বিভিন্ন জায়গা থেকে, বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদেরকে ডোনেশন করা হচ্ছে– সেই ডোনেশনের থেকে আমরা নিজে খাবার আয়োজন করে অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করি— তার পাশাপাশি ডোনেশনের টাকা থেকে আমরা কিছু অসহায় মানুষদের ঘর তৈরির জন্য টিন বিতরণ করেছি এবং ২ জন অসহায় বোনের বিয়েতে আমরা কিছু আসবাবপত্র দিয়েছি নগদ টাকাও দিয়েছি। আমরা শুধু মৌলভীবাজারে কাজ করছি না, মৌলভীবাজার আশেপাশে যে গ্রামগুলো সেই গ্রামগুলোতে সাহায্য করছি।
অপচয় রোধ করার জন্য আমার এই উদ্যোগটা ছিল আমি চেষ্টা করছি যে মানবতা কাজটা প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাওয়ার জন্য। ইনশাআল্লাহ আগামীতে এভাবেই কাজ করে যাব।